রাশেদুল ইসলাম সম্রাট :
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তদন্ত ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে দুই বিভাগের চার শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে, আর একই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও ২১ শিক্ষার্থীকে অভিভাবকসহ মুচলেকা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. মুহসিন উদ্দীনের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে গত বুধবার (২২ অক্টোবর) এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯১তম সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি আলোচনার পর অনুমোদন দেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের পরিচয় :
বহিষ্কৃত চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (AIS) বিভাগের এবং একজন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী।
তারা হলেন—
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বহিষ্কৃত চারজনসহ মার্কেটিং বিভাগের মোট ১০ জন এবং অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ১১ জন শিক্ষার্থীকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে অভিভাবকদের সঙ্গে প্রক্টর দপ্তরে হাজির হয়ে লিখিত মুচলেকা দিতে হবে।
এই মুচলেকায় উল্লেখ থাকবে যে, ভবিষ্যতে তারা কোনো ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গ, অসদাচরণ বা বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে পারবে এবং তাতে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ মুচলেকা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের চলমান একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ স্থগিত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করা হয়েছে।
মুচলেকা দিতে হবে যেসব শিক্ষার্থীকে :
মার্কেটিং বিভাগের ১০ শিক্ষার্থী-
আফ্রিদি হাসান, আজিজুল ইসলাম চয়ন, আলিফ হোসাইন নয়ন, মো. আশিক ইলাহী, মো. সবুজ মিয়া, হাজ্জাজ হোসেন মিশন (২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষ),
মো. তাহমিদ হোসেন সিয়াদ, মোহাম্মদ আরাফাতুন নূর হৃদয়, মো. শাহাদাত হোসেন (২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষ),
এবং আবুল কালাম আজাদ রুমন (২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষ)।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ১১ শিক্ষার্থী: অর্পণ রায়, আসিফ আহমেদ, প্রীতম মল্লিক (২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষ), বর্ণ বরণ সরকার, আশরাফুল হক চৌধুরী, চিরঞ্জিত কুমার সাহা, লাদেন মিয়া (সাদমান), কল্যাণ মজুমদার (২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষ), এবং সেফাত আহমেদ খান, মো. আব্দুল গাফফার, সুরজ আহমেদ শিশির (২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষ)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. মুহসিন উদ্দীন বলেন,
“ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেয়, এরপর সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে বহিষ্কার ও মুচলেকা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।”
গত ১২ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস এবং মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষটি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নির্মাণাধীন বিটাক ভবনের বালুর মাঠে সংঘটিত হয়। ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং দীর্ঘ আলোচনার পর এ শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই পদক্ষেপ ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা—শিক্ষাজীবনে ক্রীড়া বা অন্য কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে সহিংসতায় জড়ানো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং এর ফল হতে পারে বহিষ্কার বা কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিমধ্যেই এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ প্রশাসনের কঠোর অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার কেউ মনে করছেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ দেওয়া যেত।
তবে প্রশাসনের অবস্থান স্পষ্ট—“শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে কোনো ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গ বরদাস্ত করা হবে না।”